ওআইসি কি? ওআইসি-র গঠন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৪.৫০ ভাগ মুসলমান। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের তেমন কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠন ছিল না। সেই জন্য ১৯৬৯ সালে মুসলিম দেশসমূহ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়এ তোলে তার নাম OIC। এখানে আমরা ( OIC ) ওআইসি কি? ওআইসি-র গঠন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।
Formation and objectives of OIC

ওআইসি কি? 

১৯৬৯ সালে সারাবিশ্বের মুসলিম দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ঐক্যানুভূতিকে একাত্মতা করার লক্ষ্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গোড়াপত্তন করে। যার নাম ওআইসি (OIC)। এর পূর্ণরূপ হলো: Organisation of Islamic Cooperation।

যদিও প্রতিষ্ঠাকালীন OIC-এর পূর্ণরূপ ছিল Organization of Islamic Conference। ২০১১ সালের ২৮ জুন নাম পরিবর্তন করে Organisation of Islamic Cooperation করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সদস্য রাষ্ট্র ছিল ২৫টি। 

বর্তমানে OIC এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৫৭টি। এছাড়া ওআইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে ৫টি রাষ্ট্র, ১টি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ও ৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে।


ওআইসি-র গঠন (Formation of OIC)

১৯২৪ সালে ওসমানিয়া খিলাফতের বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে মুসলিম জাতিসত্তার ঐক্যের শেষ কেন্দ্রবিন্দু নিঃশেষ হয়ে যায়। তারপর থেকে জাতি-রাষ্ট্রের ধারণার প্রবল তোড়ে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলো একের পর এক স্বাধীন হতে থাকে এবং ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, সংস্কৃতি আর ইতিহাস-ঐতিহ্য ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার চেতনাকে ছাপিয়ে যায়। 

এমতাবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের কাছ থেকে শুধু বিচ্ছিন্নই হয়নি বরং তারা পরস্পর নানাবিধ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং এ সুযোগে ইহুদি-খ্রিস্টান চক্র মুসলমানদের ওপর তাদের আধিপত্যকে ক্রমশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। 

কিন্তু অনেক পরে হলেও ১৯৬৯ সালে বায়তুল মোকাদ্দাসে ইহুদিরা অগ্নিসংযোগ করলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ তাঁর নিন্দা জানায় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। তখনই তারা মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ওআইসি মুলত তাদের সে অনুভূতি থেকেই জন্ম।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরাইল ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। আর তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় গোটা মুসলিম বিশ্বে। ২৫ আগস্ট ১৪টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কায়রোতে আলোচনায় বসেন। ঐ বৈঠকে সৌদি আরব প্রস্তাব করে যে, যেহেতু বিষয়টি গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য স্পর্শকাতর এই বিষয়টি সম্পর্কে সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বৈঠক করা জরুরি। 

মরক্কোর রাজধানী রাবাতে দ্রুততার সাথে সে বছর ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর তিনদিনব্যাপী একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭০ সালের ২২ থেকে ২৭ মার্চ প্রথমবারের মতো মুসলিম মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে সৌদি আরবের জেদ্দায় তৃতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ওআইসি-এর একটি খসড়া সনদ অনুমোদিত হয়। শুরু হয় ওআইসি-এর অগ্রযাত্রা।

ওআইসি-র সাংগঠনিক কাঠামো
ইসলামিক কনফারেন্স তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ করে চলেছে। এগুলো হলো- 

১. মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের কনফারেন্স, 

২. মুসলিম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কনফারেন্স, 

৩. ইসলামি সেক্রেটারিয়েট ও পার্শ্ব সংগঠনসমূহ।

রাষ্ট্রপ্রধানদের কনফারেন্সই ওআইসির সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল সংস্থা। মুসলিম বিশ্বের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ বিবেচনা করা এবং ওআইসির নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধন করাই এর প্রধান কাজ।পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কনফারেন্স প্রতিবছর একবার অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কনফারেন্সে কোরাম হয় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দ্বারা।

অন্যদিকে, সেক্রেটারিয়েট হলো ইসলামি কনফারেন্সের প্রধান কার্যনির্বাহী সংস্থা। এ সেক্রেটারিয়েট একজন সেক্রেটারি জেনারেল ও তিনজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ প্রয়োজনীয় স্টাফদের নিয়ে গঠিত। সেক্রেটারিয়েটের কাজ হলো কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং কনফারেন্সের কাছে কাজের রিপোর্ট প্রদান। তাছাড়া কনফারেন্স পার্শ্ব সংগঠনসমূহের কার্যাবলিও দেখাশোনা করে ।

ওআইসি-র ৭টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো:

১. সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইসলামি সংহতি বৃদ্ধি করা।

২. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এবং কাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা সংহত করা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা ।

৩. সকল প্রকার বর্ণ বৈষম্যের অবসান এবং সবরকমের ঔপনিবেশবাদের বিলোপ সাধনের চেষ্টা করা। 

৪.সুবিচারভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রয়োজনীয় সমর্থন দান।

৫. পবিত্র স্থানসমূহের নিরাপত্তা বিধানের সংগ্রামকে সমন্বিত, সুসংহত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায় সংগ্রামকে সমর্থন করা এবং তাদের অধিকার আদায় ও দেশ মুক্ত করার কাজে সাহায্য প্রদান ।

৬. মুসলমানদের মান-মর্যাদা, স্বাধীন ও জাতীয় অধিকার সংরক্ষণের সকল সংগ্রামে মুসলিম জনগণকে শক্তি যোগানো।

৭. সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।


Post a Comment

Previous Post Next Post