বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলি।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন হলো বাংলাদেশের অন্যতম একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানে আমরা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এর গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
Bangladesh public service commission

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন‌

আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার কাঠামোয় দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। এ জন্য বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রে মেধার ভিত্তিতে কর্মকর্তা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়। মেধা যাচাই করার জন্য প্রয়োজন যোগ্যতাসম্পন্ন তীক্ষ্ণ ধীশক্তি ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা হবে মুখ্য এবং অন্য সবকিছু গৌণ। 

বাংলাদেশে মেধাসম্পন্ন যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী বাছাই করার জন্য ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সরকারি কর্ম কমিশন আদেশ জারি করেন। 

এ আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি (প্রথম) কর্ম কমিশন ও বাংলাদেশ সরকারি (দ্বিতীয়) কর্ম কমিশন নামে দুটি কমিশন গঠিত হয়। প্রথম কর্ম কমিশনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের বাছাই, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব ছিল। দ্বিতীয় কর্ম কমিশনের দায়িত্ব ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাছাই, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও অন্য বিষয়াদি সম্পর্কিত। 

১৯৭৭ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির ৫৭ নং আদেশ বলে দুটি কর্ম কমিশনের পরিবর্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়। নবগঠিত এই কমিশনের নাম হয় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (Bangladesh Public Service Commission)। ১৯৭৭ সালের ২২ ডিসেম্বর এই আদেশ কার্যকর হয় এবং এখন পর্যন্ত একটি কর্ম কমিশন বিদ্যমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন সভাপতি ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে সেরূপ অন্যান্য সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন গঠিত হবে। 

রাষ্ট্রপতির ৫৭ নং অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য সংখ্যা সভাপতিসহ অন্যূন ৬ জন এবং অনূর্ধ্ব ১৫ জনে নির্ধারিত করা হয়। 

সংবিধানের ১৩৮ (১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক কর্ম কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কমিশনের অর্ধেক সদস্য এমন ব্যক্তি হবেন যারা বিশ বছর বা ততোধিককাল সরকারি কর্মে নিয়োজিত। 

সংবিধানের ১৩৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সংসদ কর্তৃক প্রণীত যেকোনো আইন সাপেক্ষে সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করবেন সেরূপ হবে। 

সংবিধানের ১৩৯(১)অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কমিশনের সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যদের কার্যকাল হবে ৫ বছর অথবা ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্ব-স্ব পদে বহাল থাকবেন। তবে অসদাচরণের জন্য দৈহিক অসমর্থতা বা মানসিক বিকৃতির কারণে জাতীয় সংসদের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দ্বারা সমর্থিত প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে কমিশনের সভাপতি বা অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে স্বীয় পদ হতে ইস্তফা দিতে পারেন। 

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ সরকার এক অধ্যাদেশবলে প্রথম ও দ্বিতীয় কর্মকমিশনকে একত্রে সমন্বিত করে দেন। বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল একটি সরকারি কর্ম কমিশন বিদ্যমান রয়েছে। যা 'বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন' (Bangladesh Public Service Commission) নামে পরিচিত।

সরকারি কর্ম কমিশনের ভূমিকা ও কার্যাবলি

সংবিধানের ১৪০ ও ১৪১ অনুচ্ছেদে কর্ম কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কে বিধানাবলি সন্নিবেশিত আছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কার্যাবলি ও দায়িত্ব নিম্নরূপ: 

১. প্রজাতন্ত্রের কাজে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা। যেমন:

i. প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা (Preliminary test)

ii. লিখিত পরীক্ষা (Written test)

iii. মৌখিক পরীক্ষা (Viva voce)

iv. ডাক্তারি পরীক্ষা (Medical test)

v. পুলিশি তদন্ত (Police Verification)

২.রাষ্ট্রপতি কোনো বিষয়ে পরামর্শ চাইলে বা কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো বিষয় কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হলে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ প্রদান করবেন ।

৩.কর্ম কমিশন প্রতিবছর মার্চ মাসের প্রথম দিবসে বা তার পূর্বে পূর্ববর্তী ৩১ ডিসেম্বরে সমস্ত এক বছরের স্বীয় কার্যাবলি সম্পর্কে রিপোর্ট প্রস্তুত করবে এবং তা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করবে।

রিপোর্টের সাথে একটি স্মারকলিপি থাকবে এবং স্মারকলিপিতে নিম্নোক্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যথা : 

ক. কোনো ক্ষেত্রে কমিশনের কোনো পরামর্শ গৃহীত না হলে তার কারণ এবং 

খ. যে সকল ক্ষেত্রে কমিশনের সাথে পরামর্শ করা উচিত ছিল অথচ করা হয়নি সেক্ষেত্রে পরামর্শ না করা সম্বন্ধে কমিশন যতটুকু অবগত ততটুকু লিপিবদ্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি উক্ত রিপোর্ট ও স্মারকলিপি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন।

৪. আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন। রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে কমিশনের সাথে পরামর্শ করবেন:

ক. প্রজাতন্ত্রের কর্মের জন্য যোগ্যতা এবং উক্ত কর্মে নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়াদি।

খ. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদান, পদোন্নতি এবং উক্ত কর্মের এক শাখা হতে অপর শাখায় স্থানান্তর ও বদলিকরণ এবং এর জন্য প্রার্থীর উপযোগিতা নির্ণয় সম্পর্কে অনুসরণীয় নীতি ও বিষয়াদি।

গ. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কান্ডারীদের কার্যকাল, চাকরির শর্তাবলি এবং অবসর ভাতা সম্পর্কিত বিষয়াদি।

ঘ. প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়াদি।

Post a Comment

Previous Post Next Post